ঢাকা,বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

টেকনাফে ২০০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার উদ্বোধন

জসিম মাহমুদ, টেকনাফ ::
টেকনাফে করোনা আক্রান্ত স্থানীয় ও রোহিঙ্গাদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে ইউনিসেফের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বাস্তবায়িত আইসিডিডিআরবি’র ২০০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার ও বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবার উদ্বোধন করা হয়েছে।

আজ সোমবার সকালে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে এটি উদ্বোধন করেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আলম।

টেকনাফ উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যখানে এবং টেকনাফ-কক্সবাজার আঞ্চলিক মহাসড়কের পশ্চিমে অবস্থিত আইসিডিডিআরবি’র ডায়রিয়া সেন্টার কমপ্লেক্সে এ সেন্টারটি তৈরি করা হয়েছে। সামাজিক ও শারীরিক দূরত্বতা বজায় রেখে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেন্টারটির কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। অস্ট্রেলিয়া, জার্মান, সুইডেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সরকার এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতায় এই বৃহৎ আকারের আধুনিক করোনা আইসোলেশনটি নির্মাণ করা হয়। গত মে মাসে এই সেন্টারের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। দীর্ঘ চার মাস পর নির্মাণ কাজ শেষে এটি উদ্বোধন করা হয়েছে।

এসময় জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি তমু হযুমি,আইসিডিডিআরবি’র সিনিয়র প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর চিকিৎসক জিয়াউল ইসলাম, জাতিসংঘের স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থা ডব্লিউ,এইচ,ও’র (হো) চিকিৎসক মুকেশ প্রজাপতি,ইউএনএফপি এর রোসেলিডা রাফায়েল,ইউনিসেফের এজাতুল্লাহ মাজিদ, কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের প্রতিনিধি ও স্বাস্থ্য সমন্বয়ক চিকিৎসক আবু তোহা এম আর এইচ ভূঁইয়া,আইসিডিডিআরবি’র প্রিন্সিপল ইনভেস্টিগেটর চিকিৎসক মো মুনিরুল ইসলাম ও টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক টিটু চন্দ্র শীলসহ আইসিডিডিআরবি’র বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্টানে অংশগ্রহন করেন আইসিডিডিআরবি’র নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর জন ডি ক্লেমেন্স ও আইসিডিডিআরবি’র ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক চিকিৎসক তাহমিদ আহমেদ।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, “জীবন বাঁচাতে ইউনিসেফ এবং আইসিডিডিআর,বি’র সঙ্গে হাতে হাত রেখে একসঙ্গে কাজ করছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। টেকনাফে নির্মিত ২০০ শয্যার কোভিড-১৯ আইসোলেশন ও চিকিৎসা কেন্দ্রটি এক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ।”

কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, “জনসংখ্যার ঘনত্ব খুব বেশি হওয়ার কারণে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির কোভিড-১৯ মহামারির জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে। নির্মিত আইসোলেশন সেন্টার ও বিশেষায়িত চিকিৎসা কেন্দ্রটি স্থানীয় ও রোহিঙ্গা– উভয় জনগোষ্ঠীকে গুরুত্বপূর্ণ সেবা প্রদান করবে।”

ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি চিকিৎসক তমু হযুমি বলেন,বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ এ আক্রান্তের সংখ্যা এখনও বেড়েই চলেছে। জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে নজিরবিহীন এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে ইউনিসেফ নিবিড়ভাবে বাংলাদেশ সরকার এবং উন্নয়নে অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছে।”
অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি কোভিড-১৯ এর সঙ্গে সম্পর্কিত সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ, আক্রান্তদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং উপাত্ত ব্যবস্থাপনা-সম্পর্কিত বিষয়গুলো জোরদারে সহায়তা করতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করছে ইউনিসেফ। এ ছাড়াও ইউনিসেফ জাতীয় পর্যায়ে এবং একইসঙ্গে কক্সবাজারে বসবাসরতদের মাঝে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ এবং আক্রান্তদের চিকিৎসায় সহায়তা দিতে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা সরঞ্জাম ও সামগ্রী ক্রয় করছে।

ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আইসিডিডিআরবি’র নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর জন ডি ক্লেমেন্স বলেন,“এই ব্যতিক্রমী সময়ে গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে ইউনিসেফের সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে পেরে আমরা গর্বিত। এ সংকট মোকাবিলায় আমাদের যেসব কর্মী অগ্রভাগে রয়েছে তাদের প্রচেষ্টাকে আমরা সাধুবাদ জানাই।”

আইসিডিডিআরবি’র কমিউনিকেশন সূত্র জানায়, এ কেন্দ্রটি উপজেলার স্থানীয় ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীতে করোনা শনাক্ত ও গুরুতর অসুস্থ রোগীদের অক্সিজেন থেরাপিসহ চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হবে।প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে। করোনা যুদ্ধে অগ্রভাগে থাকা প্রায় তিনশ জনের অধিক উচ্চ প্রশিক্ষিত ও নিবেদিত চিকিৎসক, নার্স, রোগীর পরিচর্যাকারী, ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান, ফার্মাসিস্ট ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী দ্বারা এই চিকিৎসা কেন্দ্র পরিচালিত হবে। যেসব গুরুতর রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য যান্ত্রিক ভেন্টিলেশনের প্রয়োজন হবে, তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর জেলা হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রগুলোতে পাঠানো হবে। বর্জ্য সামগ্রীর নিরাপদ নিষ্পত্তির জন্য একটি ইনসিনিটার বা বর্জ্য পোড়ানোর চুল্লি স্থাপন করা হয়েছে।
এছাড়াও কোভিড-১৯ রোগের বিস্তার রোধে এই কেন্দ্রের সচেতনতা কর্মসূচি থাকবে। ইউনিসেফের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে আইসিডিডিআর’বি এই চিকিৎসা কেন্দ্রটি পরিচালনা করবে।

পাঠকের মতামত: